করোনা বিপর্যয় মোকাবেলায় প্রয়োজন সামাজিক ঐক্য, স্থানীয় নেতৃত্ব ও স্থানীয় অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন

 

সোহেল মাহমুদ,

দৈনিকভোলাটাইমস্ ::   বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় সকল এনজিও ও সুশীল সমাজ সংগঠনের প্রতিনিধিত্বকারী নেটওয়ার্ক যেমন এডাব, বিডিসিএসও কোঅর্ডিনেশন, ডিজাস্টার ফোরাম, এফএনবি, নাহাব এবং নিরাপদের নেতৃবৃন্দ করোনা ক্রান্তি মোকাবেলায় সমন্বিতভাবে জরুরি কিছু দাবি নিয়ে তারা আজ একটি ভারচুয়াল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনের শিরোনামছিল, “করোনাবিপর্যয় মোকাবেলায় বাংলাদেশের জাতীয় ও স্থানীয় এনজিও”।সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২এবং দুর্যোগের জরুরি আদেশে সম্ভাব্য সকল পক্ষের সম্মিলিত সমন্বয়, বৃহত্তর সামাজিক ঐক্য এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে যুক্ত করতে গুরুত্ব আরোপকরেন।

এই জরুরি পরিস্থিতির মধ্যেও খাদ্যসহ জরুরি পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ বজায় রাখতে সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনেগ্রামীণ ও স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক কর্মচারীদের চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও তারা জরুরি ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনের আরেকটি বক্তব্য ছিল, স্থানীয় সরকারের নেতৃত্বে স্থানীয় পর্যায়ের সকল জরুরি কাজ সমন্বয়ের স্বার্থে স্থানীয় সকল পক্ষকে যুক্ত করে স্থানীয়করণকে উৎসাহিতকরা।
কোস্ট ট্রাস্ট ও বিডিসিএসও কোঅর্ডিনেশনের জনাব রেজাউল করিম চৌধুরী ভারচুয়াল সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করে। বক্তব্য রাখেন, নিরাপদের আব্দুল হাসিব খান ও হাসিনা আক্তার মিতা, এফএনবি’র মোঃ রফিকুল ইসলাম, এডাবের একে এম জসিম উদ্দিন, নাহাবের ড. এহসানুর রহমান, ডিজাস্টার ফোরামের ইমন এবংপরামর্শক আব্দুল লতিফ খান। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হন ও বক্তব্য রাখেন নোয়াখালি থেকে প্রান-এর নুরুলআলম মাসুদ, ময়মনসিংহের টিইউএসের ফারুক আহমেদ, বাগেরহাট থেকে উদয়ন বাংলাদেশের শেখ আসাদ। দেশেরবিভিন্ন স্থান থেকে নানা মাধ্যমের সাংবাদিকগন অডিও-ভিজুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের এনজিও-সিএসওদের পক্ষ থেকে তৈরি করা বাংলা ও ইংরেজি অবস্থানপত্র সকলের সাথে ইমেইল ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সকলের পক্ষ থেকে জনাব আব্দুল লতিফ খান, সাতটি দাবিতুলে ধরেন, যানিরূপ: (১) এই করোনা ক্রান্তি মোকাবেলার সকল সমন্বয়কাজে স্থানীয় এনজিও ও সুশীল সমাজ সংগঠনকে নিয়ে স্থানীয় পর্যায়েই সমন্বয় গড়ে তুলতেহবে; (২) গণমানুষের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনারজন্য করোনা দুর্যোগ সংক্রান্ত সরকারি বিদ্যমান তথ্য প্রকাশের পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে হবে; (৩) জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ সরাসরি প্রকল্প বাস্তবায়নে না গিয়ে তাদেরকার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও কারিগরিসহায়তারমধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন এবংবাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সংগঠন সমূহকে সরাসরি তহবিল হস্তান্তর করবেন; (৪) স্থানীয় পর্যায়ে কর্মরত এনজিও ও সিএসওকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ করতে হবেএবং এগুলো বাস্তবায়নে তাদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, তারাই এসব ক্ষেত্রে সর্বাগ্রেসাড়া প্রদান করে থাকে; (৫) করোনা ক্রান্তি পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন থেকেই গ্রামীণ অর্থনীতিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলমান রাখতে হবে এবং এ কাজে অনিবার্য সহায়ক এনজিও ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান সমূহের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিতে হবে; (৬) স্বাস্থ্য খানে বিকেন্দ্রিকরণ পদ্ধতি যথেষ্ট বিনিয়োগ করতে হবে এবং মনোযোগ দিতে হবে যাতে প্রান্তি কপর্যায়ের মানুষ পর্যন্ত সকল সেবা পেতে পারেন; এবং (৭) সরকারি-বেসরকারি কার্যালয় ও প্রতিষ্ঠান সমূহের কার্যক্রম এই দুর্যোগ অনুযায়ী পুনর্বিন্যাস করতে হবে বিশেষ করে স্কুলে দূরত্ব বজায় রাখা ও পরিচ্ছনতার ব্যবস্থা বাড়াতে হবে।
নিরাপদের আব্দুল হাসিব খান উল্লেখ করেন, কিভাবে স্থানীয় পর্যায়ে এনজিওরা নিজেদের উদ্যোগে এই সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে এসেছে এবং সরকারের ত্রাণ কাজে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
এফএনবি’র মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ২ হাজার এনজিও ইতিমধ্যে করোনাক্রান্তি মোকাবেলায় নিজ নিজ এলাকায় উদ্যোগ গ্রহন করেছে এবং তাদের মধ্যে থেকে ১৫০টি এনজিও লিখিত তাদের কার্যক্রমের ব্যাপারে আমাদের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছেন।
এডাবের একে এম জসিম উদ্দিন বলেন, বর্ষা মৌসুম সমাগত প্রায়। করোনা ক্রান্তির পাশাপাশি আমাদেরকে সম্ভাব্য ঘুর্নিঝড় ও বন্যার ব্যাপারেও আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। তিনি এসব দুর্যোগের স্থানীয় এনজি ওদের পূর্ব অবদানের কথা স্মরণ করে তাদেরকেও প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
নাহাবের ড. এহসান বলেন, গ্রান্ডবারগেইন প্রতিশ্রুতিতে যেভাবে দেখানো হয়েছিল, করোনা ক্রান্তির দুর্যোগেও আবার প্রমাণিত হলো যে স্থানীয় সংগঠনই যে কোনো দুর্যোগে প্রথমও সর্বোত্তম সাড়া প্রদানকারী।
ডিজাস্টার ফোরামের নইম সরওয়ার বলেন, করোনা বিষয়ক সচেতনতা এখনও অনেকটাই শহুরে মধ্যবিত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ। গ্রামে গ্রামে সচেতনতা বাড়াতে এনজিও সিএসওকে কাজে লাগাতে হবে। দেশে চলমান ত্রান কাজের অবস্থাপনার কথা উল্লেখ করেতি নিপ্রকৃত কৃষকের হাতে সরকারের প্রণোদনা পৌঁছার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি প্রস্তাব করেন, সারা দেশকে অধিক আক্রান্ত, কম আক্রান্ত বা শূন্য আক্রান্ত অঞ্চলে ভাগ করে শূন্য আক্রান্ত অঞ্চলে বিশেষব্যবস্থায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।
কোস্ট ট্রাস্টের রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথা সম্ভব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উৎপাদন ও সরবরাহ কাজ চালিয়ে যেতে হবে, কারণ এটাই দেশের অর্থনীতির প্রাণ। দেশের ক্ষুদ্র ঋণের সাথে কোনো না কোনো ভাবে জড়িত ১৫ কোটি মানুষের স্বার্থে স্থানীয় এনজিও ও ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালিয়ে যাবার গুরুত্ব তিনি তুলে ধরেন। এই সংগঠনগুলো বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি ও জরুরি ত্রাণ কাজ উভয় ক্ষেত্রে অপরিহার্য।