দৈনিক ভোলা টাইমস্ঃঃ গত দু’দিনের টানা বর্ষণের ফলে তলিয়ে গেছে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল। এতে পাহাড় ধসে ৫ রোহিঙ্গাসহ মারা গেছে ১২ জন। আর পানিতে ভেসে গিয়ে প্রাণ গেছে এক রোহিঙ্গা শিশুসহ ৮ জনের। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ।
গেল ৩ বছরে এতো বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখেনি কক্সবাজারের মানুষ। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সকাল থেকে বুধবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী ও ঈদগাঁও উপজেলা থেকে এসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
অন্যদিকে পৃথক পাহাড় ধসে হ্নীলা ইউনিয়নের বিলিজারপাড়ায় মাটির নিচে চাপা পড়ে একই পরিবারের ৫ সদস্যের মৃত্যু হয়। হোয়াইক্যংয়ের পাহাড় ধসের পর আরও এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একই দিন মহেশখালী উপজেলার সিপাহীর পাড়ায় মোর্শেদা বেগম নামে এক কিশোরীও মারা যায়।
পানিতে ভেসে গিয়ে ৮ জনের মৃত্যু
মঙ্গলবার সকালে বালুখালী ১০ নং ক্যাম্পে পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে এক রোহিঙ্গা শিশুর মৃত্যু হয়। একইদিন বিকেলে মহেশখালী উপকূল থেকে ভাসমান অবস্থায় এক জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (২৮ জুলাই) সকালে মাছ ধরতে গিয়ে কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় দরগাহ পাড়া খালে নিখোঁজের পর বিকেলে তিন কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন, মোহাম্মদ শাহাজাহান (১৪), আব্দুল্লাহ (১৫) ও ফারুক (১৩) । এছাড়াও সন্ধ্যায় উখিয়া উপজেলার রাজাপালং থেকে দুইজন ও পালংখালী ইউনিয়ন থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যারা ২৪ ঘণ্টা ধরে পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ ছিল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রামু ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার সোমেন বড়ুয়া বলেন, বুধবার সকালে দরগাহ পাড়া খালে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয় তিন কিশোর। সেখান থেকে দীর্ঘ চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল তাদের মরদেহ উদ্ধার করেছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, একই পরিবারের ৫ জনসহ পাহাড় ধসে প্রাণ গেছে ৬ জনের। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঝুকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরতদের সরিয়ে আনা হচ্ছে। এছাড়াও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৭ শতাধিক মানুষ।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়া তিনজনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। গেল ২৪ ঘণ্টা তারা নিখোঁজ ছিল। রাজাপালং এ দুইজন ও পালংখালীতে একজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর বরা হবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গেল ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে প্রাণ গেছে ২০ জনের। বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য ১৫০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ, ৫ লাখ নগদ অর্থ, নিহত সবাইকে ২৫ হাজার করে নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের সরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসনের একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চলছে।
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত জেলার ৬০ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে। তাদের সেখানে খাবার সরবারহ করা হচ্ছে।