ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’র তাণ্ডবে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে দ্রুত সব ধরনের পাকা ফসল ঘরে তোলার নির্দেশ

ভোলা: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’র তাণ্ডবে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে দ্রুত জমির পাকা ধানসহ সব ধরনের পাকা ফসল ঘরে তোলার জন্য কৃষকদের নির্দেশ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা। তবে যেসব ধান বা অন্য ফসল এখনো পাকেনি, সেগুলো কাটতে পারছেন না চাষিরা। ফলে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা। ভোলা কৃষি বিভাগ জানায়, বর্তমানে কৃষকের বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেতে বোরো, চিনা বাদাম, মচির, মুগ, ফেল ডাল ও সয়াবিন রয়েছে। এবার ৩৮ হাজার ৭৮৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে এখন পর্যন্ত কাটা হয়েছে ৬৮ ভাগ। এবছর জেলায় চিনা বাদাম আবাদ হয়েছে- ১৪ হাজার ৪৫০ হেক্টর, এর মধ্যে কাটা হয়েছে ৪০ ভাগ; মরিচ আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ২২৫ হেক্টর, কাটা হয়েছে ২৫ ভাগ; মুগ আবাদ হয়েছে ৩৭ হাজার ৪১৫ হেক্টর, যার মধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ কাটা হয়ে গেছে। এসব পাকা ফলন দ্রুত কাটতে নির্দেশ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। রোববার (১৭ মে) সকাল থেকে ভোলা সদরের ভেলুময়িা ইউনিয়নের চরগাজীসহ বিভিন্ন এলাকায় ধানসহ অন্য ফসল কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। এর মধ্যে কিছু পরিমাণ ফসল ঘরে তুললেও অন্যগুলো ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগের নির্দেশ পেয়ে ফসল ঘরে তোলা শুরু করে দিয়েছেন কৃষকরা। ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চরগাজী গ্রামের কৃষক হারুন মাঝি বলেন, এবার ৪ একর জমিতে বোরো আবাদ করছি। যার কিছু পাইকা (পেকে) গেছে, আর কিছু ধান এখনো কাঁচা রইছে (আছে)। শুনছি, ঘূর্ণিঝড় আইবো, তাই পাকা ধান কাটা শুরু করছি। তয় (তবে) ২ একর জমির ধান কাটা শেষও হয়া (হয়ে) গেছে। ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হরলাম মধু বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ফসল রক্ষায় আমরা কৃষকদের দ্রুত পাকা ফলন কেটে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছি। শনিবার (১৬ মে) থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এ বিষয়ে প্রচরণা করা হচ্ছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১ হাজার ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিম কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। সিপিপি ভোলার উপ-পরিচালক মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বর্তমানে ভোলায় ৪ নম্বর স্থানীয় সংকেত চলছে। ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে আমরা আমাদের স্বেচ্চাসেবীদের উপকূলে মাইকিং করার নির্দেশ দিয়েছি। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ মোকাভিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে শনিবার (১৭ মে) জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আগাম প্রস্তুতি হিসাবে বেশ কিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা, স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিক্যাল টিম গঠন, জেলেদের জন্য সতর্কবার্তা ও মাছ শিকারে যাওয়া আগে মৎস্য বিভাগকে অবহিত করা, ত্রাণ মজুদ এবং জেলায় ১ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। ‘আম্পান’ নামের এ ঝড়টি প্রবল শক্তি সঞ্চয় করে বর্তমানে ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অভিমুখে এগোচ্ছে। ফলে সাগর উত্তাল থাকায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে চলছে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় আম্পান মঙ্গলবার (১৯ মে) অথবা বুধবার (২০ মে) বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তাই উপকূলীয় উপজেলায় কর্তন উপযোগী সব ফসল শিগগিরই ঘরে তোলার জন্য কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।