16 October 2023 , 12:01:47 প্রিন্ট সংস্করণ
হাসান পিন্টু, লালমোহন থেকে,
দৈনিক ভোলাটাইমস:: ভোলার লালমোহন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহাজন পট্টির বাসিন্দা প্রায় ৬২ বছর
বয়সী পরেশ মজুমদার। কোথায়ও বিয়ে, গায়ে হলুদ, পূজা বা কোনো মিছিল
হলেই ডাক পড়ে তার। এসব অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি ঢোলে বাদ্য বাজান। নিজের
মোট বয়সের অন্তত ৪৭ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন এই ঢোলের সঙ্গে। ঢোলে বাদ্য
তুললেই চলে পরেশ মজুমদারের জীবন।
তিনি বলেন, বাবাও ঢুলি ছিলেন। তাই আমিও খুব ছোট বেলা থেকে শখ করে
ঢোল বাজাতে শুরু করি। তবে সেই শখ কেবল শখই থেকে যায়নি। এখন ঢোল
বাজানো পেশা হয়ে গেছে। ১৫ বছর বয়স থেকে এখন পর্যন্ত নিয়ম করে ঢোল
বাজাই। কোথায়ও বিয়ে, গায়ে হলুদ, পূজা বা কোনো মিছিলের আয়োজন
হলেই আমার ডাক পড়ে। বহুদিন ধরে এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকায় এখন অনেকেরই
পরিচিত। ঢোল বাজিয়েই চলে সংসার।
পরেশ মজুমদার বলেন, প্রতিটি বিয়েতে ঢোল বাজালে পাই ১৫ শত টাকা। পূজার
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঢোল বাজিয়ে পাই ৫ হাজার টাকা। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে
ঢোল বাজালে পাওয়া যায় ১২ শত টাকা। এছাড়া কোনো মিছিলে ঢোল বাজালে
পাই আটশত থেকে এক হাজার টাকা। এতে করে মাসে ৫—৭ হাজার টাকা পাই।
তিনি আরো বলেন, সংসারে স্ত্রীসহ চার মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের মধ্যে তিনজনকে
বিয়ে দিয়েছি। এখন বাসায় একজন আছে। সে স্থানীয় একটি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে পড়ছে। কোনো ছেলে নেই। তাই অনেক কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও বাধ্য হয়েই এ
ঢোল বাজানোর কাজ করছি। বয়স হয়েছে, তাই শরীরও ততো ভালো না। প্রতি
মাসে অন্তত পাঁচ হাজার টাকার ওষুধই কিনতে হয়।
তিনি বলেন, আরো কয়েক বছর আগে ভালো কাজ আসতো। এখন আর তেমন কাজ
নেই। তাই আয়ও কম। এ জন্য গত কয়েক বছর আগে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকমীর্র
কাজ নেই। ওইখান থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। যার জন্য সংসার
চালাতে একটু সুবিধা হয়। তবে ওষুধের খরচ যাওয়ার পর তেমন আর কোনো টাকা
থাকে না। যা থাকে তা দিয়েই কোনো রকমে সংসার চলে।
পরেশ মজুমদার আরো বলেন, আমার বয়স এখন প্রায় ৬২ বছর। শরীরেও নানান রোগ
বাসা বেঁধেছে। জানি না আর কতো দিন এই ঢোল বাজানোর কাজ করতে
পারবো। কাজ করতে পারি আর না পারি, পরিবার তো চালাতে হবে। তাই আমার
দাবি— অসহায়দের জন্য সরকারি যে চাল বরাদ্দ রয়েছে সেখান থেকে আমাকে চাল
সহায়তা দিলে স্ত্রী—সন্তানকে নিয়ে একটু ভালোভাবে থাকতে পারবো।
এ বিষয়ে লালমোহন পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. সাইফুল কবীর জানান, পরেশ
মজুমদার ঢোল বাজানোর পাশাপাশি আমাদের পৌরসভারও একজন
পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তিনি অসহায় হওয়ায় তাকে আমরা সব সময় প্রয়োজনীয়
সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করি। সামনে কোনো সুযোগ—সুবিধা আসলেও
তাকে দেওয়া হবে।