9 March 2020 , 12:27:56 প্রিন্ট সংস্করণ
তুহিন খন্দকার,
দৈনিক ভোলাটাইমস:: আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, করোনায় আক্রান্ত হাজার হাজার লোক প্রতিদিন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরছে। করোনা নিয়ে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হইচই করছে আমেরিকান মিডিয়া হাউজগুলোই। মুহুর্তে মুহুর্মুহু সংবাদ ছাপাচ্ছে তারা করোনা নিয়ে৷ এতে করে সারা পৃথিবীতে একটা প্যানিক ছড়িয়ে পড়েছে ভালোভাবে যে, করোনা ধরলে আর বুঝি রক্ষে নেই৷
অথচ, করোনায় মৃতের সংখ্যার পাশাপাশি আমাদের যদি সুস্থ হয়ে উঠার ডাটাও মিডিয়া জানাতো, তাহলে বোধকরি মানুষ এভাবে প্যানিকড হয়ে পড়তো না। মানুষ এখন ভাবছে, করোনা মানেই মৃত্যু। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার ২% এর কাছাকাছি।
কিন্তু, এই ফি বছর, খোদ আমেরিকাতেই নর্মাল ফ্লু’তে মারা গেছে বিশ হাজারের মতো মানুষ৷ একেবারে টাটকা খবর কিন্তু। নর্মাল ফ্লু মানে বুঝেছেন তো? এই যে জ্বর, সর্দি-কাশি ইত্যাদিতে। দেখুন, এই নর্মাল ফ্লুয়ের জন্য দুনিয়ায় হাজার রকমের প্রতিষেধক মজুদ আছে।
আছে বাহারি রকমের চিকিৎসা৷ এতোকিছু থাকা সত্ত্বেও, আমেরিকার মতোন দেশে এই ফ্লুতেই মারা গেছে বিশ হাজারেরও অধিক মানুষ। পুরো বিশ্বের হিশেব যে কি, তা তো বলার বাইরে। অথচ, যে করোনাকে নিয়ে এতো হইচই মিডিয়া করছে, সেই করোনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২ হাজারের মতো। এই করোনার কিন্তু কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। কোন প্রতিষেধক না থেকেও এতে মারা গেছে ২ হাজার, আর হাজার রকমের প্রতিষেধক মজুদ থাকার পরেও নর্মাল ফ্লুতে আমেরিকায় নাই হয়ে গেছে বিশ হাজার। তাহলে, কোনটাকে বেশি ডেঞ্জারাস মনে হচ্ছে ডাটানুসারে? কিন্তু দেখুন, আমেরিকার মিডিয়া এটা নিয়ে কোন বাতচিত করছেনা। তারা সারাদিন ওই এক করোনা নিয়েই আছে। এখানে কি তাহলে কোন ‘গেম’ চলছে? আমি জানিনা।
‘করোনা আর মৃত্যু’ শব্দ দুটো শুনতে শুনতে আপনি নিশ্চয় ভয়ে কুঁকড়ে আছেন, না? তাহলে আপনাকে কয়েকটা আশার কথা শুনাই৷ হয়তো আপনার ভয়টা চলে যাবে। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন।
এখন পর্যন্ত করোনাতে কোন শিশুর মৃত্যু সংবাদ পাওয়া যায়নি। শিশু মানে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ০-৯ বছরের কোন শিশুর মৃত্যুর ঘটনা দুনিয়ার কোথাও ঘটেনি। তাই, আপনার বাচ্চার ব্যাপারে বেশি ভয় পাওয়ার দরকার নেই। তবে, সতর্ক থাকতে হবে অবশ্যই।
১০-১৯ বছরের একজনের মৃত্যু সংবাদ পাওয়া গেছে এখন পর্যন্ত, তবে অনেকের মতে, সেটাও রহস্যজনক। আদৌ করোনায় কিনা, তা পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত না।
করোনা আক্রান্ত ৭০,০০০ মানুষের ওপরে একটা স্ট্যাডি হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে ৮১% মানুষের সর্দি-কাশি হচ্ছে করোনার ফলে, আবার সেরেও যাচ্ছে। সুতরাং, বিশ্বাস রাখুন, আপনার-আমার যদি করোনা হয়েও থাকে, সাধারণ জ্বর-সর্দির মতো তা আবার সেরেও যাবে, ইন শা আল্লাহ৷ আশা নিয়ে বাঁচুন, ভালো থাকবেন।
ডাটা অনুসারে, করোনায় যারা মারা গিয়েছে, তাদের ৫০ ভাগের বয়স ৭০ বছরের উর্ধ্বে। আর ৩০% এর বয়স ৬০-৬৯ এর মধ্যে। মানে, ৮০% লোক যারা মারা গেলো বা যাচ্ছে, তাদের গড় বয়স ৬০-৭০ এর উর্ধ্বে। আরো স্পষ্টভাবে, এই করোনায় বুড়োরাই মারা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
না, ভয় পাওয়ার কারণ নেই। বুড়ো হলেই যে করোনায় ধপাস করে মারা পড়ছে, তা কিন্তু নয়। রিসার্চে দেখা গেছে, বুড়োদের মধ্যে করোনায় যারা মারা যাচ্ছে, তারা প্রায় সবাই আগে থেকেই কোন না কোন রোগে আক্রান্ত, যেমন- ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, অ্যাজমা, লিভার ইত্যাদি।
সব ডাটাকে একত্র করলে যা সারমর্ম দাঁড়ায় তা হলো, সুস্থ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের বেশি, তাদের ক্ষেত্রে করোনায় মারা যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাই, আশাহত হবেন না। মনে জোর রাখুন।
গত দু’দিন ধরে আমার নিজেরও হালকা হালকা গা গরম। মাঝে মাঝে মনে হলো, আমাকে বুঝি করোনাই পেয়ে গেলো। তো, আমি যদি এই ফ্যাক্টরগুলো সম্পর্কে না জানতাম, আমি কি ভাবতাম জানেন? আমি ভাবতাম, আমার যদি সত্যিই সত্যিই করোনা ধরা পড়ে, তাহলে সেদিন আমি আর বাসায় ফিরবো না। আমার মাধ্যমে আমার মা, স্ত্রী, সন্তান আক্রান্ত হবে, আমি এটা ভাবতেই পারিনা। তো, কি করবো তাহলে? কক্সবাজারের দিকে চলে যাবো, কিংবা কোন নির্জন পাহাড়ি অঞ্চলে। বাসায় কোনোভাবে ব্যাংকের কার্ডটা পাঠিয়ে বলবো, ‘বেঁচে থাকলে দেখা হবে’।
তো, বাঁচলে তো ফিরবো। যদি না বাঁচি। সম্ভবত আমার লাশটাও খুঁজে পাবেনা আমার পরিবার৷ এই ভাবনাগুলো কোত্থেকে আসতো জানেন? প্যানিক থেকে। প্যানিক এতো ভয়ানক জিনিস। তাই, ভাইয়েরা, প্যানিক হবেন না। স্বাভাবিক জীবনযাপন করুন, কিন্তু অতি অবশ্যই সতর্কতার সাথে৷
এই যে বিশাল একটা লেখা পড়লেন, এই লেখার সারমর্ম কি? আমি কি করোনা নিয়ে হাসি তামাশা করছি? পাত্তা না দিতে বলছি?
না, মোটেও তা নয়। করোনাকে অবশ্যই পাত্তা দিতে হবে। সতর্ক হতে হবে৷ বাইরে বেরুলে মাস্ক পড়তে হবে, বারেবারে হাত ধুতে হবে, লোকারণ্য এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে। সবই করতে হবে, কিন্তু প্যানিক হওয়া যাবেনা। প্যানিক হলে স্বাভাবিক জীবনযাপন বিপর্যস্ত হবে ভীষণভাবে। তখন করোনায় আপনার মৃত্যুর সম্ভাবনা না থাকলেও, প্যানিক থেকে তৈরি ডিপ্রেশানে আপনার মৃত্যুর সম্ভাবনা কিন্তু হুড়মুড় করে বেড়ে যাবে।
২০০৩ সালে সারস ভাইরাসে এ্যাটাক করেছিলো প্রায় ২৬ টি দেশে। মৃত্যুহার ছিলো ১০%।
২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লুতে ৫৭ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয় । মৃত্যুহার ৪.৫%
২০১৪ সালে ইবোলায় মৃত্যুহার ২৫% । মারা যায় ১১,৩১০ জন।
আর ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুহার মাত্র ২% । মারা গেছে এ পর্যন্ত ৩০৫২ জন।
এই যখন ঘটনা, তখন করোনা ভাইরাসে দুনিয়া ব্যাপি এতো আতঙ্ক ছড়ালো কেন? কেন ইতালি, চায়না, হংকং এর এয়ারপোর্ট একেবারে জনশূন্য হয়ে গেল । গ্রোসারি মার্কেট, হোলসেলের দোকান একেবারে স্টক শূণ্য হয়ে গেলো । কেন প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ডলার শেয়ার মার্কেটে রাতারাতি ক্র্যাস হয়ে গেলো । কেন ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিতে ব্যাপক ধ্বস নামলো ?
কারণ হলো, সংবাদ কনজিউমের পুরো ন্যাচারটিই দুনিয়াব্যাপি খুব দ্রত বদলে গেছে ।
২০০৩ সালে ফেসবুক, হোয়াটসএ্যাপ ছিলোনা, যখন সারস ভাইরাসে ২৬ টি দেশ আক্রান্ত হয়।
২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লুর সময় দুনিয়াব্যাপি ফেসবুক ব্যবহারকারী ছিলো মাত্র ১৫০ মিলিয়ন।
২০১৪ সালে ইবোলার সময় হোয়াটসএ্যাপ ব্যবহার কারী মাত্র ২৫০ মিলিয়ন।
আর ২০২০ সালে অন্যান্য মিডিয়া বাদ, শুধু ফেসবুক আর হোয়াটসআপ ব্যবহার করছে লাখ, কোটি, মিলিয়ন না, প্রায় চার বিলিয়ন মানুষ (আনুমানিক) ।
সোস্যালমিডিয়ার শক্তি ব্যাপক। প্রতি সেকেণ্ডেই খবর ছড়াচ্ছে । কথায় বলে, দুঃসংবাদ ঘোড়ার আগে ছুটে। একটা ভাইরাসে একজন মানুষের মৃত্যু সংবাদ এখন মুহুর্তেই বিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে । সুতরাং মানুষতো আতংকিত হবেই । দূর বলতে এখন আর কিছুই নেই । চায়নার উহানের দূর্ঘটনাকে মনে হবে আপনার পাশের বেডরুমেই ঘটছে । মিডিয়ার পাওয়ারই দুনিয়াব্যাপি মানুষকে আতংকিত করেছে এবং গ্লোবাল ইকোনিমিতে ধ্বস নামিয়েছে।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মতে- সাবধান হোন। আতংকিত হবেন না ।
আপনার বয়স যদি ৫০ এর নীচে হয়, তবে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ০.০২% ।
৫০ এর ওপরে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ১.৫%, তাও যদি শ্বাসকষ্ট থাকে। যত লোক মারা গেছে তাদের ৯৮% এর বয়স ৮০ এর ওপরে।
আর আমরাতো পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নগরের বাতাস প্রতি সেকেণ্ডে গ্রহণ করে , ফরমালিন যুক্ত খাবার দিনে তিনবেলা পেটে চালান করে, ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের গোডাউনে বাস করে, মশা মাছির উপদ্রবকে নিত্য সাথী করে আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে ইস্পাতের মতো শক্ত করে নিয়েছি । আমাদের সাথে পাল্লা দিতে হলে বরং করোনা ভাইরাসকেই মাস্ক পরে আগাতে হবে । সুতরাং এতো পেনিক হওয়ার কিছু নেই।
ভাইরাস যদি বাতাসে উড়তো আর যে ভাবে পেনিক ছড়িয়েছে সেভাবে সংক্রমিত হতো, আর, সংক্রমনের সাথে সাথে মানুষ মারা যেতো, তবে দেশে দেশে এতোক্ষণে লাশের পাহাড় হয়ে যেতো । তাই পেনিক হওয়া যেমন ঠিকনা, আবার একেবারে এটি খুব সিম্পল একটা ব্যাপার- এরকম ভেবে অবহেলা করে মৌজ মাস্তি করাও ঠিক না । কথায় বলে, সাবধানের মার নেই। সাবধান হোন । কিন্তু পেনিক হবেন না । পেনিক ছড়াবেন না । শীত চলে গিয়ে উষ্নদিন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই করোনার খেল খতম হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
বিপদ কেটে যাক । আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সবাইকে, সব জাতিকে, সব মানুষকে হেফাজত করুন । বেশি বেশি ইস্তিগফার করি।
আমিন।